শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬

বাকরখানি

খাবারে আমাদের সুনাম বিশ্বময়।  আমরা মাছে- ভাতে বাঙ্গালী।  এখন হয়তো কোন কোন সমালোচক বলে,আমরা ফাস্ট ফুড চাইনিজে ঢাকাবাসী।তোমরাই বলো ঢাকাইয়ারাই কি শুধু    চাইনিজ খায়,অন্য কেউখায় না বুঝি । আলবাত খায়। তবে কেন এই অপবাদ আমাদেরই  দেয়া হবে। যদিও ইদানিং ফাস্ট ফুড  চাইনিজ আমরা  একটু  বেশিই খাই। তাতে কি?-সমালোচকদের কাজেই তো শুধু সমালোচনা করা।আমরা মোগলাই কাচ্চি বাকরখানিও তো খাই।কই সেগুলোর কথা তো সমালোচকেরা বলে না।
অনেক  খাবারের সাথে আমাদের আবেগ ,সৃতি ,ভালোবাসা জড়িয়ে থাকে।লুকিয়ে থাকে অনেক অজানা ইতিহাস।এমনি এক শৈশবের সৃতি জড়ানো আবেগ মাখানো খাবারের নাম-বাকরখানি।প্রেম-বিরহের সৃতি স্বাক্ষর সরূপ যেই বাকরখানির নামকরণ তার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদেরও কিছু শৈশবের সুখ,দুঃখ হাঁসি-কান্নার ইতিহাস।শিয়ালখালির মাঠে ফেড়িওয়ালা থেকে কিনে খাওয়া বাকরখানির স্বাদ আজও আমার মুখে লেগে আছে।শৈশবে শিশুদের ভালো খাবারে থাকে অরুচি,আর অখাদ্য কুখাদ্যে থাকে সুরুচি।তবে বকরখানি কিন্তু মোটেও অখাদ্য কুখাদ্য নয়।মচমচে খাস্তা তন্দুরে ভাজা একটি রুটি;মাঝে তিনটি দাগ কেটে পেট ফেড়ে দেয়া হয়েছে।খেলার মাঠে তা খাওয়ার পিছনে বিশেষ একটি কারণও ছিল। সেই বাকরখানি ছিল সাধারণ বাকরখানির থেকে ভিন্ন ও সুস্বাদু। শিয়ালখালির বাকরখানি আর এখনকার বাকরখানির মাঝে অনেক পার্থক্য। শৈশবের সেই স্বাদ এখন আর কোথায়ও খুজে পাই না। সেই স্বাদ নেই,সেই আবেগও নেই। এখনকার বাকরখানি তো আগের থেকে অনেক আধুনিক হয়েছে-ফেড়িওয়ালার টিনের ডিব্বা ছেড়ে সুপার শোপের কাচের সুকেসে উঠেছে।স্বাদটাই শুধু হারিয়ে গেছে। সেই স্বাদ আমি আজও খুঁজে ফিরি;যেটা থাকতো একটা টিনের চারকোনা ডিব্বার ভিতর,যাতে  কোন আলোর ঝলকানি ছিল না,ছিল মমতার পরশ।ডিব্বাটির তিন পাশে টিন এক পাশে সচ্ছ কাঁচ,সেটা দিয়ে ভিতরের সাজানো সারিসারি বাকরখানি দেখা যেত।সেই সচ্ছ কাঁচের ফাঁকের বাকরখানি দেখে কতো ছেলে স্কুলে যাওয়ার দোহাই দিয়ে মায়ের থেকে টাকা নিয়ে বাকরখানি খেতো তার হিসাব নাই।
আমাদের কেউ যখন ফেড়িওয়ালা থেকে কোন বাকরখানি কিনতো,তখন আমাদের তিন চারটা মাথা এক সাথে সেই কাঁচের ফাঁকে হুমড়ি খেয়ে পরতো।চোখগুলো অনুসন্ধান চালাতো;কোনটা সবচেয়ে বড়, কোনটা খাস্তা বেশি।কোনটায় লাভ বেশি। কখনো এমন একটা দিতে বলতাম যেটা ফেড়িওয়ালার পক্ষে বের করে দেয়া অসম্ভব। তখন বাধ্য হয়ে অন্য একটা পছন্দ করতে হতো।পছন্দনীয়টি যখন ডিব্বা থেকে বের করে তার উপর রসগোল্লার রস মাখিয়ে আমাদের হাতে দিত ,তখন মনে হতো যেন হাতে চাঁদ পেয়েছি।মচমচে ভাজা বাকরখানির উপর রসগোল্লার রসের প্রলেপ।সেটাও বিনামূল্যে! বাকরখানি কিনার সময় উপস্থিত সব বন্ধু সেটাতে সমান ভাগ পেতো। যে বাকরখানি কিনেছে আর যে কেনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল দু'জনেরই সমান অংশ।শৈশবে বাকরখানি খাওয়ার আসল মজাই ছিল সবে মিলে খাওয়ার মজা।এখন হয়তো তার থেকে  অনেক দামি ও মজার মজার অনেক কিছু খাই কিন্তু সবে মিলে খাই না।আমাদের মাঝে সাম্যতা নাই,তাই সেই স্বাদও নাই।

সেই আবেগ,সেই ভালোবাসা,সেই বাকরখানির স্বাদ হারিয়ে গেছে।যেমন হারিয়ে গেছে শৈশবের বন্ধুরা আর বাকরখানির সাথে বিনামূল্যে রসগোল্লার রস দেয়ার প্রচলন ও সেই বিক্রেতা।