বুধবার, ১০ মে, ২০১৭

ক্লাসের ফাঁকে

আমরা স্কুলে আছি আর শিক্ষক ক্লাসে নাই এরচেয়ে আনন্দের সংবাদ স্কুলজীবনে নাই।  যেইদিন স্যার ক্লাসে না আসতেন অথবা যখন স্যার ক্লাস থেকে চলে যেতেন তখন আমরা বিভিন্ন খেলায় মেতে উঠতাম।  এরমধ্যে বিশেষ একটি খেলা-যেটি চতুর্থ শ্রেণীতে  অধ্যয়ণকালীন আমাদের শ্রেণীকক্ষে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা; ছেলে -মেয়ে, ছোটো-বড় সবার কাছে সবক্লাসে সমান জনপ্রিয় খেলা। তবে মেয়েদের কাছেই খেলাটি ছিলো বেশি জনপ্রিয়।
আমার দুই বেঞ্চ সামনে বসতো মেয়েরা ।দশ বিশ ত্রিশ বলে বলে ওরা একে অন্যের হাতের সাথে হাত বাড়ি মারতো।হাতের সাথে হাত লাগায় হাততালির মত  ছন্দময় আওয়াজের সৃষ্টি হতো। কখনো উপর-নীচ করে কখনো আড়াআড়িভাবে হাতে হাত লাগাতো। কখনো দুইজন কখনো একাধিকজনে মিলে এই খেলাটি খেলতো। দূর থেকে আমি তাদের ঐ খেলা দেখতাম।ভাবতাম আমিও যদি পারতাম তাদেরে ঐ সূর ও ছন্দে ভেসে যেতে।কী ছন্দময় সে ধ্বনি! চিত্রময় সে কর্মপ্রদর্শন।

ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকা ঐ খেলা -যাকে আমরা দশ বিশ ত্রিশ খেলা বলতাম। কেউ কেউ এটাকে "হাতেহাত" খেলা অথবা "কাভি উপর কাভি নীচ"খেলাও বলতো।
আমাদের ক্লাসে ছিল একটি মেয়ে- গোলাপকে শিশির কিংবা বৃষ্টি ধুয়ে দিলে সেই গোলাপ যেমন নির্মল ও প্রাণবন্ত হয় মেয়েটি ছিল তেমনই নির্মল ও প্রাণবন্ত।
মেয়েটির নাম - আয়শা;সে যতটা চঞ্চল ততটাই খোলা-মনের।তারচেয়ে বেশি ঐ খেলায় দক্ষ।  সে-ই সর্বপ্রথম আমাকে খেলাটির কলাকৌশল ও নিয়মকানুন শিখিয়ে দেয়। খেলাটি শিখে আমি খুবই শিহরিত ও উত্তেজিত হই।অনেক উৎসহের সাথে কথাটি আমার বোনদের জানাই।কিন্তু আমার উত্তেজনা আমার আকর্ষণ আমি তাদের  মাঝে দেখতে পাই না।আমার যাতে এতো আগ্রহ তাতে ওদের কোন আগ্রহ নেই।কেন জানি বয়স যত বাড়ে কৌতূহলীভাব তত কমে।

শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৭

পৃথিবী সংকীর্ণ হয়ে আসছে

মানব জাতি তাদের সম্মিলিত প্রয়াস ,অভিজ্ঞতা বিনিময় এর মাধ্যমে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছে।কিন্তু আজ মানুষ মানুষের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ।জাতীয়তাবাদের নামে জাতিতে জাতিতে ভীতি ও ঘৃণা ছড়িয়ে পরেছে।মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বয়ং মানুষ ।যে মানুষ একসাথে খাদ্য উৎপাদন করেছে,সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সংরক্ষণ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে,একসাথে তা সংরক্ষণ করেছে।তারাই আজ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। পুরো পৃথিবী মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আবাদ হয়েছে।তাই পুরো পৃথিবীর উপর সকল মানুষের হক আছে।মানুষকে কখনো কোন মানচিত্রের খাঁচায় আবদ্ধ রাখা যায় না।পুরো পৃথিবীই মানুষের জন্য উন্মুক্ত।পৃথিবীর প্রতি ইঞ্চি মাটির উপর প্রতি মানুষের হক আছে।কাঁটাতারের বিষাক্ত বিষে  সিরিয়ায়,মালয়েশিয়ায় -টলার ডুবিতে এবং আরাকানে মনবতা বারবার দংশিত হচ্ছে।এতো বড় পৃথিবী ওদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেল ! কারো কাছে কি ওদেরকে ঠাঁই দেয়ার মত সামান্য জায়গাও নেই ? এই পৃথিবীতে ওদের কি কোন অধিকার নেই ? কাঁটাতার মানুষের এই সুন্দর পৃথিবীটিকে সংকীর্ণ করে দিয়েছে ।পৃথিবীর এক প্রান্তের লোকেরা জমি ও খাদ্য নিয়ে বিলাসিতা করে,অন্য প্রান্তের মানুষ জমি ও খাদ্যের অভাবে মরে ।

পৃথিবীর কোন দেশ আজ বিপর্যয়ের মুখে পড়লে অন্য দেশের মানুষ  সত্যিকারের ব্যথিত হয় না।কিছু কর্ণসেবা প্রদান করে হয়তো ।খাদ্যাভাবে যখন বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে থাইল্যান্ড মালয়েশিয়ায় টলার ডুবে মানুষ মরে ,তখন তাদের জন্য মালয়েশিয়দের মন কাঁদে না। জালেমের জুলুমে আরাকানে মানুষ মরলে তাদের জন্য বাঙালিও মন কাঁদে না । এরই নাম জাতীয়তাবাদী চেতনা ! কথা একটাই সে তো আমার দেশের লোক নয়।

মালয়েশিয়ায় টলার ডুবে বাঙালি মরলে মালয়েশিয়দের অন্তর কাঁদে না ।ভাবখানা যেন ওরা তো বাঙালি-মানুষ নয়;ওদের কাছে মানুষ হতে হলে তো ওদের স্বদেশি হতে হয় ! যেমন আরাকানি ভাইদের জন্য বাঙালির অন্তর কাঁদে না ।কারণ ওরা আরাকানি-মানুষ নয়-বাঙালির কাছে; বাঙালির কাছে মানুষ হতে হলে তো বাঙালি হতে হয়। জাতীয়তাবাদীদের কাছে মানুষ হতে হলে তার স্বদেশি হতে হয় ! জাতীয়তাবাদীরা শুধু ভাবে ওরা আমার স্বদেশি কিনা,একবারও ভাবে না ওরাও মানুষ ,ওরাও মুসলমান । তারা মানচিত্রের জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী কিন্তু বিশ্বভ্রাতৃত্বে বিশ্বাসী নয় । জাতীয়তাবাদের কারণে মানবতা আজ সংকটাপন্ন ।ইসলাম কোন জাতীয়তাবাদে বিশ্বসী নয়। ইসলাম মানবতার ভ্রাতৃত্বে বন্ধনে  বিশ্বাসী । ইসলাম পরো পৃথিবীর মানুষকে মানবতার ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে ।যারা নিজেদেরকে মানবতাবাদী বলে জাহের করে অথচ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী তাদেরকে বলি জাতীয়তাবাদী তখনো মানবতাবাদী হতে পারে না । কারণ এরা একে অন্যের বিপরীত ।তার মানবতাবাদ তার মানচিত্রের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ । কেউ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হবে আর তার মধ্যে লুন্ঠন ও আগ্রাসনের মনোভাব থাকবে না কিংবা অন্য জাতীর প্রতি ঘৃণা-বিদ্ধেষ ও তাচ্ছিলর অনুভূতি থাকবে না তা হতে পারে না ।