হে ঈমানদারগণ, জোরপূর্বক স্ত্রীর উওরাধিকার হরণ-(যৌনঅধিকার বা যেকোন অধিকার) তোমাদের জন্য হারাম, তালাক হলে তার প্রদত্ত দেনমোহর তার হাতে ফিরিয়ে দাও। যদি না সে ব্যভিচারী হয় এবং স্ত্রীর সাথে ইনসাফদার জীবনযাবন কর। (সূরা নিসা আয়াত ১৯)
'বৈবাহিক ধর্ষণ' বিষয়টা অত্যন্ত আলোচিত একটি বিষয় যার অর্থ হচ্ছে স্বামী কর্তৃক জোরপূর্বক স্ত্রীর অমতে তার সাথে মিলন করা বা যৌনাচার করা। যেকোন বিবেকবান মানুষই এমন আচরনের বিরোধিতা করবে। মুসলিমরাও স্বাভাবিকভাবে এটা সমর্থন করে না, কিন্তু মুসলমানেরা ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ শব্দটা ব্যাপারে আপত্তি করে। তাদের মতে এই শব্দটা যৌক্তিক নয়। তাদের মতে এটা নির্যাতন হতে পারে ধর্ষণ নয়। আর এটা দেখেই অনেকে ভুল ভাবে যে মুসলিমরা হয়ত এটাকে সমর্থন করে।
আল্লাহ করো উপর তার সামর্থের অতিরিক্ত চাপিয়ে দেন না (আল কোরআন ২ঃ২৮৬) একপক্ষ "ম্যারিটাল রেপ" বন্ধ করার জন্য আইনকে হাতিয়ার বানাচ্ছেন, আরেক পক্ষ "ম্যারিটাল রেপ" কে জায়েজ করার জন্যে ধর্মকে হাতিয়ার বানাচ্ছেন। ফলে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা জমে উঠেছে, এবং একটি গুরুত্বহীন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ইসলামী শরীয়ায় বিয়েঃ যেকোনো একপক্ষের প্রস্তাব অন্য পক্ষ হতে প্রস্তাবের সম্মতির মাধ্যমে যে যৌনঅধিকার কায়েম হয় সেটাই বিবাহ।আর ইসলামি আইনে বলে এই সঙ্গম অধিকার পরিপূর্ণ অধিকার।অস্থায়ী বা আংশিক নয়।যতদিন বিবাহ টিকে আছে এই অধিকারও আছে। বিবাহ করলেই যেকোন যৌনাচার বৈধ হয় না শরিয়তের বৈধতা লাগে।আর আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তার সামর্থের অতিরিক্ত চাপিয়ে দেন না।বৈধ কারণ থাকল স্ত্রীর অধিকার আছে স্বামীকে বাধা দেয়ার। প্রতিবার সম্মতি একটি জটিল প্রক্রিয়া তারচে ভালো আগেই বৈধ কারণগুলো জানা থাকা।
আমাদের সমাজে বিয়েঃআমাদের দেশে বিবাহকে দেখা হয় সমাজ স্বীকৃত স্বামী- স্ত্রীর সারাজীবনের পবিত্র বন্ধন হিসেবে।বিবাহর মূল উদ্দেশ্য দুটি, বৈধ যৌন অধিকার ও সন্তান লালনপালন। এই দুটি কোনটিকে বাদ দিয়ে অথবা অসম্পূর্ণ রেখে বিবাহর পূর্ণতা দেয়া যায় না। যেখানে বিবাহ হচ্ছে সন্তান লালন পালন ও যৌনসম্পর্ক কেন্দ্রিক যেখানে সম্মতির মত পঁচা দড়িতে কিভাবে স্বামী-স্ত্রীর যৌন সঙ্গমকে বেঁধে রাখা যাবে? দাম্পত বন্ধনকে ভালোবাসা দিয়ে মজবুত করতে হবে।আইনের শিকল পড়িয়ে আবদ্ধ নয়। মুসলিম বিবাহ আইন যেখানে বলে এটা মোটামুটি একটি স্থায়ী বন্ধন।আমাদের সংবিধানে আছে মুসলিম বিবাহ আইন, পারিবারিক আইন ও মুসলিম উত্তরাধিকার আইন সব শরিয়াহ আইন অনুযায়ী হবে।একারণে কোন প্রজ্ঞাপন দিয়ে এই আইন মিটানো সম্ভব না।
এবার আসি পশ্চিমা দেশগুলোর কথায়
ইউরোপে অথবা পশ্চিমা দেশগুলোতে বিবাহ মানে আমাদের মত এমন স্থায়ী বন্ধন না।সারজীবনের ব্যাপারও না।যৌন অধিকারের একমাত্র মাধ্যমও না,মানে বিবাহ ছাড়াও সেখানে যৌন চাহিদা মিটানোর অন্য পথ পন্থা আছে। সেখানে শুধু দুজনের সম্মতিতে বছরের পর বছর এমনকি আজীবন একসাথে থাকা যায়, সংসার করা যায়। বিবাহ সেখানে শুধু কিছু আইনি প্রকৃয়াকে সংযোজন বিয়োজন করে মাত্র। তাদের কাছে প্রতিবার সঙ্গম একএকটা ভোগ্য বস্তু । তাই প্রতিবার ভোগের পূর্বে ভোগের অনুমতির প্রয়োজন। আপনার বউ মানে সে আপনার একার নয়, সে যে করোই হতে পারে সম্মতিতে।তাই যেকোন ভাবে বা আইন করে আপনার মাথায় যদি একথা ডুকাতে পারে "সম্মতিই সব"। তবে সম্মতিতে পরকীয়াকেও স্বাভাবিক বৈধ্যতা দিতে পারবে।আইনি বৈধ্যতায় পার পেয়ে যাবে পরকীয়াকারী।পরকীয়ার বিপক্ষে বললে আপনি হবেন আইন বিরোধী। ইসলাম তো বলে দুজন সম্মত হলেও তারা শরিয়ার বাহিরে কিছুই করতে পারবে না।এমনকি তার যদি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকে তবুও নয়। ইসলামে সম্মতি মূখ্য নয় বিবাহিক বৈধতাই মূখ্য।
মেরিটা রেপ এমন এক অবস্থা যেখানে স্বামী স্ত্রীর সাধারণ সঙ্গম চলে যায় ধর্ষণের পর্যায়ে।সেটাতে থাকেনা ভালোবাসা।স্ত্রীরা ভাবতে শুরু করে,ভালোবাসা নয় ধর্ষিত হচ্ছি।আসলে এর সাথে আছে পূর্ব নির্যাতনের সম্পর্ক, আছে আরো কিছু কারণ,শারীরিক নির্যাতন, একতরফা আচরণ।
শারীরিক মিলনই যেন সব। ইচ্ছা-অনিচ্ছা, অসুখ-বিসুখের তোয়াক্কার বালা নেই। এমনকি মাসিকের দিনগুলোতেও বাদ দেয় না। পশু মত আচরণ, বিকৃত কামলিপ্সা
তাতে থাকে না প্রেম, ভালবাসা বা যৌনতার ভালোলাগা।স্ত্রীর ভাবতে থাকে ধর্ষিত হচ্ছি।স্বামীর আচরণে স্ত্রী মনে হয় তাকে ভালোবাসাবিহীন ভোগ করা হচ্ছে এই ভোগ যেন ধর্ষনের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।দেখা যাচ্ছে পুরো বিষয়টা নারীর আবেগ অনুভুতি মানুসিক প্রশান্তির বিষয় যেটা তিনি ছাড়া অন্য কেউ উপলব্ধি করতে পারেন না।স্বাভাবিক বিষয় ও আচরণ তার পরিস্থিতির করণে অস্বাভাবিক জুলুম হয়ে যাচ্ছে।
তাই মেরিটাল রেপের শাস্তি বিশ্বের সবদেশে অন্যান্য রেপের শাস্তির মত এক নয়। কোথাওবা জেল জরিমানা কোথাও আরো বেশি।আসলে এই আইনটি তাদের আত্মকেন্দ্রিক বস্তুকেন্দ্রির সমাজের বহিরপ্রকাশ মাত্র।বিবাহর পরেও সম্মতিই মূখ্য। বিবাহ করেন চাই না করেন সম্মতি থাকলে সেখানে সবই বৈধ।সম্মতি না থাকলে সবই অবৈধ।এই আইনে বিবাহকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না সম্মতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।এই আইনটা দেখা যায় উন্মুক্ত যৌনাচারের আইন।যে দেশে উন্মুক্ত যৌনাচার আছে তাদের এই আইনের প্রয়োজন আছে। তাই মুসলিম দেশেগুলোতে এই আইন নেই এটার প্রয়োজনও নেই।এই সব আইনী প্রকৃয়ায় চিন্তা চেতনায় তারা আমাদের দেশে উন্মুক্ত যৌনাচার আমদানি করতে চায়।অবাধ যৌনাচারের পথ সুগম করতে চায়।আসলে তারা বিদেশিদের চাই।এসব আইন তাদের ফাঁদ।সেই ফাঁদে ফেলে যাকে তাকে ধর্ষক বানানোর ফন্দি ।
যারা নিজেরা নিজেদের দেশের ধর্ষণ থামাতে পারে না।তাদের আইনে কিভাবে ধর্ষণ রোধ সম্ভব!ধর্ষণের শীর্ষ দেশের আইন কানুন এনে ধর্ষণ প্রতিরোধ হাস্যকর।নিজেরা ধর্ষণের শীর্ষে আছে আর বুঝাতে চায় মুসলিমরাও ধর্ষক কিন্তু তাদের ধর্ষণের খবর কেউ জানে না।সেটা হয় পরিবারে স্ত্রীর সাথে।
বৈবাহিক ধর্ষণ ঃ২৭ জেলাতে বৈবাহিক ধর্ষণ -স্বামীর কাছে ধর্ষিত হওয়ার বিষয়টি কতটা সত্য ?
আর হিউম্যান রাইটস যে ম্যারিটাল রেপকে......... বলে।জাতিসংঘ যদি বলে সেটা বিষয়ে কি বলবেন?তবে তারা যদি আগামী কাল বলে আপনার দেশের মালিক আপনার প্রতিবেশী রাষ্ট্রে। হিউম্যান রাইটস, জাতিসংঘ,বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এগুলো মূলত কতিপয় রাষ্ট্রে সার্থ রক্ষার জোট ।তাদের চিন্তা চেতনা তাদের মতাদর্শ অনুযায়ী এই সব সংস্থা পরিচালিত হয়।সংস্থা গুলো মূলত তাদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। তারা যেটাকে মনব অধিকার বলে সেটাই মানব অধিকার। যেটা বলবে না সেটা কখনই মানব অধিকার হতে পারবে না।তারাই যেন সব ভালো-মন্দের মাপকাঠি। স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া তার সাথে সঙ্গম করার প্রভাব স্ত্রীর উপর স্থান কাল হিসেবে ভিন্ন রকম হতে পারে। তাই এটার বিষয়ে সেখানকার মনোবিজ্ঞানীরা কি বলে দেখতে হবে।কোন উদ্দেশ্য প্রনোদিত চিন্তা বা থিউরি নয়।আর যার সাথে ব্যাপারটা ঘটে তার সাথে কথা বলতে হবে ।২৭ জেলায় বৈবাহিক ধর্ষণের কথা বলছেন সেটাতো এখন পর্যন্ত ধারনা ও অভিযোগ মাত্র। প্রমান করে তারপর মাতামাতি করেন।মনে রাখতে হবে আমাদের দেশে বেশিরভাগ গ্রাম্য সালিসি ও বিচার আচারে নারীদেরকে টেনে এনে নারী নির্যাতন ও বস্ত্র হরন ধারায় একটা মামলা ঠোকা হয়। নারী ঘঠিত একটি ব্যাপার এনে সুবিধা নিতে চায়।সেগুলোর অনেক গুলো সত্য কিন্তু আইন এর সাথে যারা আছে তারা সবাই জানে এগুলোর বেশির ভাগই মিথ্যা/বানোয়ট মামলা।মামলাকে জোরালো করতে আসামিকে হয়রানি করতে এগুলো করা হয়।অভিযোগ করলেই সেটা সত্য হয় না।প্রমাণ লাগে।
এই আইন গলার কাটাঃদশ বছর সংসার করলেন তারপর হঠাৎ স্ত্রীর সাথে বনিবনা হলো না।সে আপনাকে ধর্ষণকারী বলে কোর্টে অভিযোগ করলো। আপনি এখন কি করে বুঝাবেন ঐ মিলন গুলোতে তার সম্মতি ছিলো।আর সেই বা কেন এতো বড় আইনি সুযোগ হাত ছাড়া করবে? মনে রাখবেন আমাদের সংসার ইউরোপিয়ানদের মত এতো টালমাটাল না আজ এর সাথে কাল ওর সাথে।আমরা দিনে দিনে সঙ্গী পালটাই না।আমরা জীবনসঙ্গী বানাই।তাই একবারের অনুমতি সরা জীবনের জন্য।
তবে স্ত্রীর প্রতি সহনশীল হতে হবে। তার সাথে পশুর মত আচরণ করা যাবে না।সে আপনার সেরা সম্পদ এই সম্পদের উত্তম ব্যবহার করতে হবে।
উলামায়ে একরাম এর কর্তব্যঃদেশে প্রতিদিনই বিভিন্ন আইন আসছে।কিছু আইন প্রয়োজনীয় কিছু আইন চাপিয়ে দেওয়া অপ্রয়োজনীয়। এক ধরণের মহল সব সময়ই এই আইনগুলো আমদানি করতে চাচ্ছে যেগুলো অনেকক্ষেত্রে দেশ ও জাতীর এবং ইসলামের জন্য হুমকি সরূপ।এগুলো মূলত ওদের স্বার্থান্বেষী আইন। আমরা এইসবের খবর রাখি না। আমাদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।ইসলামি রাজনীতি করি,আওয়ামের রাহাবর,এতো গাফেল কিভাবে হই?আসলে ক্ষমতার যাওয়া "দূরকি বাত ,আমাদের প্রথম কাজ তো হচ্ছে মুসলিম উম্মাহের ইমান আকিদা সংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা। এই ধরনের আইনগুলোর দিকে যদি দৃষ্টি না রাখি তবে উম্মাহকে বাঁচাবো কিভাবে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন