সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯

বৃষ্টি ও পথবাসীর কাহিনী

এই যে পথ ,পাশেই একটা  আমগাছ
সেটাকে  দেখে এখন মনে হচ্ছে, 
মাথায় এক বোঝা অন্ধকার নিয়ে দাঁড়িয়ে  আছে ।
চারদিকে অন্ধকার, ডালপালা ও তার আশেপাশে জমাটবাঁধা অন্ধকার।
বিজলি চমকায়,গাছের ডাল বিজলির আলোর প্রতিবন্ধক হয়ে 
পরিবেশে এক অপরূপ চিত্রকর্ম তৈরি করে।
 অন্ধকারে বাতাসে আম পাতার সঞ্চরণ পরিবেশকে আরও রহস্য়ময় ভয়ংকর করে তুলে।

ছয়টা না বাজতেই দোকানে দোকানে জ্বল জ্বল উজ্জ্বল বিজলি বাতি ।
অন্ধকারের ভয়ে তাদের এতো আয়োজন।
ঐ আলো না থাকলে দেখা যেতো কত অন্ধকার জমেছে এই শহরে।
আকাশে কালো মেঘ,বাতাসে কালো ধূয়া,পরিবেশে অচেনা অন্ধকার।
সবকিছুতেই যেন ভয়ংকর এক ঝড়ের পূর্বাভাস।
ধূসর-কালো মেঘ আকাশ বাতাস কালো করে পরিবেশে এক অচেনা অন্ধকার সৃষ্টি করছে।
বিজলি চমকালে আকাশ আলোকিত হয়।
কৃত্রিম আলোকে অকৃত্রিম আলো ভালোভাবে পরাজিত করে।
কৃত্রিম  এই সমাজে আলোর কৃত্রিম নাগরেরা আলো নিয়ে রঙ্গ করতে ভালোবাসে ।
হোক না সেটা নকল আলো !
ওদের এই আলোর রঙ্গ দেখে ভুখা কাঙ্গালেরও রঙ্গ করার সাধ  জাগে।
আজকের এই ভয়-সঞ্চারী প্রকৃতির  নির্দয় আলো দেখে আলো-বিলাসীরাও পালিয়েছে যায় । 

আর যাদের জীবন কাটে  অন্ধকারে তাদের রাত কাটাতে হয়  এই নির্দয় আলোতে ।

নিজেদের  যারা আলো-প্রেমিক বলে দাবী করে, ওরা আজ  কোথায়? 
ওরা আলো ভালোবাসে না ,ভালোবাসে তার রঙ্গ।

শিপন ভীত-চোখে আকাশ পানে চায়।
আসন্ন বিপদটা অনুমান করার চেষ্টা করে।
বৃষ্টি  আর কী !শহরবাসীরা তো ঘূর্ণিঝড়ও ভয় পায় না।
শিপনও কিন্তু ভিতু না।

কী রোদ,কী বৃষ্টি,কী শীত,কোন কিছুই ওকে দাবাতে পারে না।
হাড় কাঁপানো শীতেও সে এক কাপড়ে উদম গায়  দিব্যি ঘুরে বেড়ায়।
গ্রীষ্মের তপ্ত দুপরে সবাই যখন একটু ছায়া খোঁজায় ব্যস্ত 
তখন ওকে শহরের তাতানো অলিগলিতে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরেতে  দেখা যায়।  
ডরায় শুধু ঐ নির্মম বৃষ্টিরে।
একবার প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় রহিম চাচা ওকে  দেখে  একটি মাত্র পাতলা কাপড় পড়ে আছে,
আর শীতের কাঁপুনি থেকে নিজেকে বাঁচাতে শরীরের সাথে যুদ্ধ করছে।
 যে শীতে মানুষ গরম কাপড় পড়েও দাঁতে দাঁত বাড়ি খায়।
সেখানে ওর কাঁপুনিটা তেমন কিছুই না।
তাছাড়া ওর কাঁপুনিটা কি শীতের না ভারসাম্য রক্ষার বুঝা যায় না।
 কিরে সুইটার পড়ছ না ক্যা?তোর শরীরে কি শীত নাই? 
-''গরীবের আবার শীত!অভাবই তো গরীবের শরীর গরম কইরা রাহে''।

রহিম চায়ের দোকানদার ;রাস্তার পাশে  টিন দিয়ে বানানো ছোট দোকান তার।
ফুটপাতে বসার জন্য দৈনিক বিশ টাকা করে পুলিশকে চাঁদা দেয়। 
তার দোকানে কুলি দিন-মজুর রিক্সাওয়ালা ঠেলাওয়ালা চা বিস্কুট খায়।
আড্ডা দেয়।তারা সবাই নিম্নশ্রেণীর। শিপন আরো নিম্নশ্রেণীর।
ও রাস্তা থাকে,রাস্তার আবর্জনা কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।

এই পৃথিবীতে রাস্তার পাশের ঐ   জায়গাটা ছাড়া ওর আর কিছুই নেই।

শিপন  রহিমের দোকানে প্রতিদিন চা খায়।
 ওর চা খাওয়া দেখে অনেকে হয়তো অবাক হয়।
হওয়ারই তো কথা।
হত দরিদ্র লোকের তো  চা খেতে মানা।
তবুও সে চা খায়।চা তা নেশা।
ও হত দরিদ্র ফুটপাথবাসী ,ওর দু'চোখ উদয়াস্ত এক মুঠো ন্ন খোঁজায় ব্যস্ত।
ওর থালায় কখনও তাজা খাবার উঠে না।
জীবন ও কাছে এক যুদ্ধ;
এই যুদ্ধের বিজয়ীর পুরস্কার এক থালা ভাত। 

এতো শীত তবুও সে সুইটার পরছে না,
ছেলেটার কষ্টের কথা ভেবে 
একবার রহিম মিয়া তার ব্যবহৃত একটা সুইটার শিপনকে দেয়।
শিপন সেটা নেয় ঠিকই ,তবে কোনদিন ওকে তা পড়তে দেখা যায়নি।
আত্মসম্মানের ভয়ে নয়, আত্মসম্মান ওনাই ।
ওর মতে আত্মসম্মান হল বড়লোকের ফ্যাশন।
গরিবের আত্মসম্মানবোধ থাকতে নেই।
পেটে ক্ষুধা রেখে মুখ বুজে থেকে কি লাভ?


সে তো ছোটলোকদের মধ্যেও বড়  ছোটলোক।
তবে আয়েস করে চা খেয়ে
 দুই বেলা ভদ্রলোক সাজে। 
তাছাড়া ও ভদ্রলোক সহ্য করতে পারে না।
নিজেকে শক্ত রাখতেই ও কখনোই গরমকাপড়  বা সুইটার পড়ে না। 

সন্ধ্যা থেকেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো।
দশটা না বাজতেই  প্রবল বর্ষণ শুরু। 
কাশটাই যেন ভেঙ্গে পড়ছে
হঠাৎ হঠাৎ বিজলির  ঝলক পরিবেশকে আরো ভয়ংকর করে তুলছে।
পথের পাশে দাঁড়ানো বাড়িগুলোর ব্যালকনি  বৃষ্টি থেকে রক্ষায় ছাউনির  কাজ করে।
যেখানে সর্বত্রই ভিজার  ভয় সেখানে এমন এক জায়গা বাস্তুহারাদের কাছে জান্নাত সরূপ।
এমনি একটি বারান্দার নীচে বিছানা পেতেছে শিপন।
এমনিতে পাততে পারেনি,
 দারোয়ানের ঝাড়ি বকুনি খেয়ে পেরেছে।
কাঁটা দিয়ে কাঁটা উঠানোর মত ধনীরা গরীব দিয়ে গরীব তাড়ায়।
 লোকে ভাবে গরীব বুঝি গরীব মারে।

 বারান্দার নীচটা বৃষ্টি থেকে রক্ষায় শেষ ভরসা।
বিছানা পেতে শুয়ে আছে, চোখে  ঘুম নাই।
গরীবের চোখে তো ঘুমের অভাব থাকার কথা না।
গরীবের অনেক অভাব থাকলেও ঘুম আর ক্ষুধার কোন অভাব থাকে না।
ঘুম আসবেই বা কিভাবে?।
পেটের খিধায়  নাড়ি ভুঁড়ি সব চিপরাচ্ছে ।

হায়রে খিধা!নাড়ি ভুঁড়ি না খাইয়া আমারে খাইয়া হালা।
আমি বাচ্চা যাই।

একটা রুটি আর দুই কাপ চা ছাড়া সারাদিনে আর কিছুই খায়নি।
দিনেও দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। 
বৃষ্টির কারণে কাগজ পলিথিন কুড়াতে বেড় হতে পারেনি।
বৃষ্টির দিন কাগজ কুড়ানো যায় না।
পথ-ঘাট সব ভিজা থাকে ।কাগজও ভিজে যায়।
তাই বৃষ্টির দিনগুলোতে ওকে অনাহারেই কাটাতে হয়।
ভাগ্য ওকে গতকাল অতিরিক্ত সাত টাকা দিয়ে ছিল ।
খেয়ে পুরে বাঁচা সাত টাকা
তাতেই এই চা- রুটি।কাল যদি বৃষ্টি হয় তবে কালও .........

পেটের ভিতরে চোঁ চোঁ করছিল,সেটা আরও বেড়ে গেলো।
বৃষ্টির উপর এমনিতেই মেজাজটা চড়ে ছিল,এখন আরও চড়ে গেলো।

মানবসৃষ্ট  শোষিত প্রথার কারণে প্রকৃতির কল্যাণী বস্তুও যখন ওদের বিরুদ্ধে যায় তখন এই সমাজের শোষিতরা স্রষ্টাকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করায় ।

বৃষ্টির ছিটায় বিছানার এক পাশ ইতিমধ্যে ভিজে গেছে।
সেদিকে কোনই খেয়াল নেই শিপনের।
ও নড়েও না ,বিছানাও সরায় না।
বৃষ্টির কাছে পরাজিত হতে নারাজ।
জীবনের কাছে পরাজিত হয়ে ও এখন পরাজয়কে ভীষণ ভয় পায়।

জীবন থেকে মুক্তির আশায় কত বার যে ব্যস্ত রাস্তার মাঝে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে!
 কিন্তু হায়,কোন গাড়িই তো ওকে চাপা দেয় না!
ড্রাইভারেরা কুকুর বিড়ালকে রেহাই না দিলেও, ছোটলোক আর মেয়ে-লোককে কখনই পিষে মারে না।

পাশে একটা নাড়াচাড়া টের পেয়ে শিপন ওর ছেড়া-ফাড়া দুর্গন্ধময় কাঁথা থেকে মাথা বের করে দেখল,বুলু ওর পাশে এসে শুয়েছে.।
ও এখানে আসার আগে বুলু কুকুরটা অবশ্য ওর এই ডেরাতেই থাকতো।
 আজ বৃষ্টি  তাই ওখানে মাথা গোঁজবার ঠাঁই নাই।
একারণেই ছাদের নীচের এই দিকটায় এসেছে।
দু'জনের একই অভাব, একই সংকট ।
খাদ্য বাসস্থানের অভাব, খাদ্য বাসস্থানের সংকট।
খাদ্য বাসস্থানের সংকটের মিলই হয়তো ওদের হৃদয়ের একাত্মতার মূল কারণ।
ওদের দুজনকেই জীবনে বহুবার ওদের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে।
ওদের উচ্ছেদের খবর এই সমাজের ভদ্রলোকেরা রাখে না।
রাখবেই বা কেন? 
ওরা তো এই সমাজের জঞ্জাল,আবর্জনা। 
ওদের না তাড়ালে কি আর শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়!
শহর সৌন্দর্যের কথা উঠলেই সিটি কর্পোরেশন নগরের কুকুর বিড়াল আর ভ্রাম্যমাণ  লোকদের উচ্ছেদে কমর বেঁধে নেমে পরে
যেন এই ভাসমান লোকেরাই শহর অসুন্দরের মূল কারণ
যদিও এই দেশে কেবল ভ্রাম্যমাণ লোকেরাই নিয়মিত ট্যাক্স দিয়ে শহরে থাকে।
যদিও সেটা সরকারি খাতায় জমা পড়ে না।

খিধের জ্বালায় ওদের পেটে যে চোঁ চোঁ ধ্বনি  হয়
 তা যদি ঐ দেহ ভেদ করে বেড়িয়ে আসতে পারতো
তবে এই শহরের আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করত,
ঘূর্ণিঝড় হত,ভূমিকম্পের সৃষ্টি হত।
 ঐ কম্পনে ঐ ঝড়ে মজুতদারেরা রক্তচোষারা উড়ে যেত,ভেসে যেত।
মহাশক্তিশালী ঐ ধ্বনি কি আর এই শহরের ছদ্মবেশী দেশপ্রেমিকের হেডফোন ওয়ালা কানে পৌঁছাবার ক্ষমতা রাখে?
ওদের কানও যে প্রোটকলে ঘেরা!
ওরা তো সারা জীবনই ধিন্-তানা  ধিন্-তানা  ধ্বনি শুনতে পায়।
গরিবের পেটের খবর শুনার জন্য ওদের কি আর একটা কানও খোলা আছে?

শিপন আর বুলুর এই অঙ্গাঙ্গীভাব দেখে কে বলবে,
 ওর কারণে বুলুকে তার ডেরা থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছে।
বুলু কি ঐ  উচ্ছেদের কথা মনে রেখেছে?
ওদের দেখে তো তা বোধ হয় না
কারণ এর আগেও ওকে অনেকবার ওর বাসস্থান ছাড়তে হয়েছে  
কিন্তু উচ্ছেদের পর উচ্ছেদকারীরা কখনই ওর  খবর নেয়নি।
শিপন নিয়েছে।
চায়ের সাথে যদি  কখনও রুটি খায় তবে রুটির কিছুটা হলেও বুলুকে দেয়
বুলু লেজ নেড়ে নেড়ে রুটি খায় আর অদ্ভুত এক ভঙ্গিমায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
শিপন নিজে নিঃস্ব অনাহারী তবুও বুলুকে রুটি দেয় হৃদয়ের টানে।

বুলু আর শিপন পাশাপাশি জড় হয়ে শুয়ে আছে।
শিপন তার ছেড়া কাঁথার একটা অংশ দিয়ে বুলুকে জড়িয়ে দেয়।
বুলুও আরামে কুঁ কুঁ ডেকে উঠে।
শিপন রেগে গিয়ে-
-হালার বৃষ্টি তরেও ছাড়ে নাই।

বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৯

পাপে পাথর

পুলিশেরে কাছে নিজের গাড়ির ব্যাটারি বাঁচাতে এক অটোরিক্সাওয়ালার মিনতি -
স্যার জানে মারেন তবু ভাতে মাইরেন না।
এক ঘণ্টা রিক্সা না চালাইলে পোলাপান বউ বাচ্চা না খাইয়া থাকবো।

পাপে পাথর ঐ হৃদয় এতে গলবে বলে তো মনে হয় না।

(অতঃপর তোমাদের হৃদয় শক্ত হয়ে গেল।
যেন তা পাথরের মত,হয়তো তার চেয়েও বেশি।
পাথরের মধ্যে এমন পাথরও আছে যা থেকে ঝরনা ফেটে বের হয়।
কোন কোন পাথর ফেটে যায় এবং তা থেকে পানি বের হয়ে আসে,
কোনোকোনোটা আল্লাহর ভয়ে কেঁপে পড়েও যায়।আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে বেখবর নন।(সূরা বাকারা, আয়াত ৭৪)

শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

রংধনু

তোমাদের ঐখানে বৃষ্টি হচ্ছে,আমি খুশি।
এখানে দাঁড়িয়ে আমি রংধনু দেখতে পারছি।
আশা করি অচিরেই আমার বাড়িতেও বৃষ্টি হবে।

অন্যের ভালো দেখে ঈর্ষান্বিত হয়েন না।হতে পারে তার দ্বারা আপনার ভালো হবে ।অথবা আল্লাহ আপনার ভালো করবেন

মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৯

দবংশো থেকে ধ্বংস

তখন ক্লাস ফোরে পড়ি।সবেমাত্র একটু আকটু বাংলা পড়তে শিখেছি। তখনও যুক্তাক্ষর পড়তে শিখিনি।'হৃদয়''কে হদয় পড়ি।ধ্বংস'কে দবংশো।
ধ্বংস'কে দবংশো পড়ে পড়ে জীবন যখন ধ্বংসের পথে।
শিখিয়ে দেওয়া বা ধরিয়ে  দেওয়ার মত কখন কেউ নেই । 
যারা আছে তারাও ইতিমধ্যে ধরেই নিয়েছে আমার আশা শেষ।
বাংলা পড়তেই যার এই হাল ,লিখতে তার কী হাল?....

এদিকে লেখার মহড়া ;যাকে বলে পরীক্ষা,সে হাজির।
বাংলা ,বিজ্ঞান,সমাজ বিষয় যাই হোক লিখতে  হয় বাংলায়।
পড়া মুখস্থ হলেও লিখতে গেলেই লাগে বিপত্তি।বানান যা লেখি তা বানানের ব-ও হয় না।
বানানকে বলি বানাম।যুক্তাক্ষর লেখার কথা বাদ-ই দিলাম।তবে আমি কিন্তু বসে ছিলাম না।
কেউ একজন বলেছিলেন,''সাইন-বোর্ড''পড়লে দ্রুত বাংলা পড়তে শিখা যায়।
তাই রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ''সাইন-বোর্ড''পড়া শুরু করি।'সাইন-বোর্ডে  যুক্তাক্ষর আসলেই আটকে যাই।বিভিন্ন ভাবে পড়ি আর ভাবি, শব্দটা কি হতে পরে?কিন্তু  কোন কূল-কিনারা পাই না। 
যুক্তাক্ষরের জট খুলতে অনেক চেষ্টা করছিলাম।কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না।একদিন এক সাইন বোর্ড পেলাম যেখানে লেখা-
                                                            ''বিপ্লব ইলেক্ট্রনিক্স''
ব ই-কার  বি পড়লাম,তারপর যা লেখা ,  তার পুরটাই আমার কাছে দুর্বোধ্য।ভাবছি শব্দটা কি 'বিলপব' হবে না বিপ্লব ?বিলপব' তো হতে পারে না।এমন শব্দ কখনও শুনিনি।শুনেছি,''বিপ্লব''।উচ্চারণ যদি বিপ্লব-ই হয় তবে প-এর উচ্চারণ পুরপুরি হয় না।অর্ধেক হয়।বাকি অর্ধেক ল-এর সাথে মিশে যায়।ঠিক যেন আরবি জযম বা তাশদীদের মত।তবে কি আরবি জযমের সাথে বাংলা যুক্তাক্ষরের কোন মিল আছে?কে জানে?
কেন যেন মনে হচ্ছে শব্দটা বিপ্লব-ই হবে।কিন্তু আমি নিশ্চিত না।তবে আমাকে বেশি দিন অনিশ্চয়তার মাঝে থাকতেও হয়নি।

এদিকে পরীক্ষা শুরু।পরীক্ষা হচ্ছে,পরীক্ষা দিচ্ছি। দরজা'ভেঙ্গে দজ্জা করে।(দরজা বলতে পারতাম না দজ্জা বলতাম)বানান এর সাথে যুদ্ধ করে।আমি তো লিখে দিয়ে আসি।কিন্তু স্যার বুঝে কিনা পরবর্তীতে আমি-ই বুঝবো কিনা কে জানে?
বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় লিখতে হয় অনেক কিছু।এরমধ্যে দরখাস্তও আছে।দরখাস্তে আবার স্কুলের নাম লিখতে হয়স্কুলের নাম যেখানে- ''আশরাফাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়''
উচ্চ'তে আবার সেই যুক্তাক্ষরের বাগড়া।
কেমন হতে পারে এই উচ্চ'র বানান?ভেবেই পাই না।
বিভিন্ন ভাবে লেখি ,কাটি।আবার সেই লেখা আঙ্গুলে ঘষে ঘষে উঠাই।
সময় বয়ে যায় , সমাধান হয় না।হঠাৎ-ই মনে পড়ে আরে স্কুলের নাম তো প্রশ্নপত্রেই লেখা থাকে ! সেখানেই দেখি না!এই তো লেখা এর সাথে   যুক্তাবস্থায় ''উচ্চ''।
তবে তো আমার ধারনাই ঠিক। এটা যেন ঠিক জযম  বা তাশদীদের মতো কাজ করছে।
আরবি এই জযম-পদ্ধতি আমি বাংলার অন্যান্য যুক্তবর্ণে প্রয়োগ করি,সফলও হই।পরে একজন আমাকে বলে দিয়ে ছিল, কিছু কিছু বর্ণ যুক্তাবস্থায় উচ্চারিত হয় না।

বাংলা পড়তে শিখে ফেলেছিএবার আমার বোনদেরকেও পড়ে শুনিয়ে দিবো। ক্ষেপাতে আসুক না আবার,তারা কি ভেবেছে এখনো আমি বাংলা পড়তে পারি না?................


সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৯

ডিসপো থেকে ওয়ান-টাইম,খুলে দেয় নতুন দুয়ার।

কারো বিবাহ অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনকে করতে ঝামেলামুক্ত,খুঁজছেন এমনই আসবাব;যা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত এবং দ্রুত পরিবেশন উপযোগী।যেখানেই স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার সাথে দ্রুত পরিবেশনের  প্রয়োজনীয়তা সেখানেই চলে আসে ডিসপোজেবলের কথা।স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ একই সাথে দ্রুত পরিবেশন এমন ধারনা থেকেই ডিসপোজেবলের উদ্ভব।disposable মানে নিষ্পত্তিযোগ্য ; এমন পণ্য যা ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া হয় ।
বাংলাদেশে এটাকে ''ওয়ান-টাইম''পণ্য বা একবার ব্যবহার উপযোগী পণ্য  বলে থাকে।সাধারণত disposable  দামে সস্তা।কিছু disposable মূল্যে ভারী।

ডিসপোজেবল সাধারণত দুই প্রকার।
১/ক্লিনিক্যাল ডিসপোজেবল ।
২/সাধারণ ডিসপোজেবল ।
সারাবিশ্বে মেডিকেল ও সার্জিকাল ডিভাইস নির্মাতারা অনেক  ডিভাইজ  তৈরি করে থাকে শুধুমাত্র একবার ব্যবহারের জন্য।এর মূল কারণ সংক্রামক নিয়ন্ত্রণ।যখন কোন ক্লিনিক্যাল ডিভাইজ শুধুমাত্র একটিবার ব্যবহার হয় তখন পরবর্তী রোগীদের ঐ রোগে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।প্রস্ততকারক সংস্থাগুলি বিভিন্ন মান ও বিধিমালা মেনে চলতে বাধ্য।তারা ডিভাইজের মান ও ব্যবহারবিধি বুঝাতে বিভিন্ন প্রতীক চিহ্ন ও সংখ্যা  ব্যবহার করে থাকে।iso 15223 দ্বারা বুঝানো হয় - 
এটি একটি মেডিকেল ডিভাইস।
EN 980 দ্বারা বুঝায় একক-ব্যবহার যন্ত্র ।শুধুমাত্র একবার ব্যবহার করতে হবে এটা বুঝাতে ৪৫ ডিগ্রি কোণের একটি বৃত্তের মাঝে 2 প্রতীক সংখ্যা ব্যবহার করা হয় ।   ক্লিনিক্যাল ডিসপোজেবল এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের অপরিহার্য অংশ।
সাধারণ ডিসপোজেবল বা ওয়ান-টাইম এর ব্যবহার সারা বিশ্বে দিনকে দিন বেড়েই চলছে।বাংলাদেশেও এর ব্যবহার শুরু হয়েছে।শহর গ্রামে সবখানে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে।

ওয়ান-টাইম এর মূল উপাদানঃসাধারণত ওয়ান-টাইম পণ্য  কাগজ ,প্লাস্টিক ,এ্যালুমিনিয়াম ,polystyrene ফেনা থেকে তৈরি হয়।
কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ঃ-
১/GPPS বা স্টাইরোফোম
২/pvc
৩/PET
৪/HIPS
৫/PP
৬/কাগজ
৭/এ্যালুমিনিয়ম

gpps দিয়ে তৈরি  স্টাইরোফোমকে বাংলাদেশে   থার্মোকল বা ফোমের পণ্য বলে থাকে।
  স্টাইরোফোমের লাঞ্চবক্স খুবই জনপ্রিয়।
 pvc কাঁচামাল দিয়ে  pvc "ওয়ান টাইম" বানানো হয়।
ক্রিস্টাল কালার বা ট্রান্সপারেন্ট  পণ্য তৈরিতে pvc কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়।
pvc  ওয়ান টাইমে বিশেষ করে বিভিন্ন পণ্য ডিসপ্লে করা হয়।
মালামাল ডিসপ্লেতে pvc  পণ্যের চাহিদা ব্যপক।     
 pet   ওয়ান টাইম গুণে ও বৈশিষ্টে  pvc এর মত।শুধু কাঁচামালেই যা পার্থক্য।
pet. pvc কন্টিনার ,কেক বক্স 
বেশ জনপ্রিয়।  

hips হলো সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব ও পচনশীল।এটা তাপ সহনশীলও বটে।
  একারণে কফিকাপ    এবং যেসব পাত্রের তাপ সহনীয়তার প্রয়োজন
 সেগুলোর বেশি ভাগই  hips এ তৈরী হয় ।  
hips  এর  কফিকাপ ও প্লেট বেশ জনপ্রিয়।

pp দিয়ে বানানো ডিসপোজেবল নরম কিন্তু সহজে ভাঙ্গে না।
ওয়াটার গ্লাস, দই  গ্লাস তৈরিতে pp দানা ব্যবহার করা হয়।

কাগজের ডিসপোজেবল বাহারি রঙে রঙিন।দেখতেও 
আকর্ষণীয়।    ফেলে দিলে মাটির সাথে মিশে যায়।
ব্রান্ড প্রচার এর জন্য অনেকেই কাগজের কাপ ,প্লেট ব্যবহার করে থাকে।

এ্যালুমিনিয়ামে বানানো ডিসপোজেবল স্বাস্থ্য-ঝুকিমুক্ত।
   এ্যালুমিনিয়াম ডিসপোতে খাবার রাখলে সেটা দীর্ঘক্ষণ গরম অথবা ঠাণ্ডা থাকে।ঠাণ্ডা খাবার ঠাণ্ডা আর গরম খবার গরম থাকে।
একারণেই চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খাবার পার্সেলে এ্যালুমিনিয়াম বক্স ব্যবহার করে।খাবার ফ্রিজিং করতেও এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার হয়।

 ডিসপোজেবল মানেই যে সেটা কেবল একবার ব্যবহার হবে এমন ধারণা ঠিক না।
কখনো কখনো এমন পণ্যকেও ডিসপোজেবল বলা হয় যা কয়েক মাস ধরে ব্যবহৃত হয়
 আধবা যার ব্যবহার  অনির্দিষ্টকাল ধরে চলে। 
 যেমন -মোটা পিপি বাটি,ডিসপোজেবল  এয়ার  ফিল্টার, 
ওয়াশ করা যায় এমন এয়ায় ফিল্টার।

প্রচলিত কিছু ডিসপোজেবলঃ- ডায়াপার,শেভিং রেজার,কম্বস,এপরন,
টয়লেট পেপার,টিস্যু পেপার,কটন বার্ডস,প্যাড,গ্লাভস, কনডম,
প্লাস্টিক বোতল,বাম্বু চপস্টিক,এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল,
এ্যালুমিনিয়াম ফয়েলবক্স ,প্লেট,বাটি, কাপ,প্লাস্টিকের চামচ,
ছুড়ি,কাঁটাচামচ,স্পার্ক,কাঠের চামচ,ক্যান বোতল,কন্টেইনার। 
যেভাবে তৈরী করা হয়ঃ-ডিসপো বা ওয়ান টাইম তৈরী করতে প্রথমে প্লাস্টিকের শীট বানানো হয়।
পরে সেই শীট ফর্মিং করে বিভিন্ন ডিসপোর আকৃতি দেয়া হয়। 
ফর্মিং এর দুইটি পদ্ধতি।
১/ভেকুয়াম ফর্মিং
২/থার্মো ফর্মিং
থার্মো ও ভেকুয়াম এর জন্য দরকার ভিন্ন ভিন্ন দু'টি মেশিন।
কোথায় পাওয়া যায়ঃ- বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ডিসপোজেবলের পাইকারি মার্কেট ঢাকার বেগম বাজারে অবস্থিত।
এছাড়াও চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে এবং সিলেটের মহাজন পট্টিতে এর পাইকারি বাজার আছে।
গ্রামাঞ্চলে কাঁচাবাজারে ঘোষদের দোকানে ওয়ান টাইম পণ্য পাওয়া যায়।

প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানঃ-বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডিসপোজেবল নিয়ে আসে সাত রং কুটিরশিল্প,
তারপর মাইজ ইন্ডাস্ট্রি লি.।বলতে গেলে এদের হাতেই বাংলাদেশের ওয়ান টাইম এর উদ্ভব ও বিকাশ।
ডেরিক জিপি,সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রি লি.প্রাইম পেট,ওয়াকিয়া,
আল-মোস্তফা,ব্রাদার্স,রোটেম আরো অনেক কোম্পানি পর্যায়ক্রমে বাজারে আসে।
প্রমি, জি কিউ,আর এফ এল,বেঙ্গল এর মত বৃহত্তর কোম্পানিগুলোও এখন ডিসপোজেবল নিয়ে এসেছে।
যেভাবে গ্রাহকের হাতে পৌঁছেঃ -বাংলাদেশের প্রায় সব ডিসপোজেবলই প্রথমে ঢাকার 
বেগম বাজারে আসে তারপর সড়ক ও নৌপথে এগুলো দেশের প্রত্যন্ত  অঞ্চলে চলে যায়। 
কিছু সাংকেতিক চিহ্নঃ- ‌‌‌ত্রিভূজ আকৃতির একটি চক্রের ভিতর 5   চিহ্ন  দিয়ে বুঝানো হয় এটি pp এর তৈরী,
ত্রিভুজ চক্রের ভিতরে 1 থাকলে সেটা pet,ত্রিভুজ চক্রের ভিতরে 6 থাকলে সেটা gpps, 
জনপ্রিয় কিছু ওয়ান-টাইমঃ-বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিসপো হচ্ছে ২০ এম এল কফি কাপ।
লাঞ্চবক্স এর মধ্যে ফোমের স্মল লাঞ্চবক্স=D21.
১৮০এম এল গ্লাস,২৫০এম এল গ্লাস,
১০" রাউন প্লেট,১১" রাউন প্লেট,
ফোমের ১২" প্লেট,৮০এম এল আইস কাপ।
লেখক
কামাল ইবনে আজিজ
ডিসপোজেবল ব্যবসায়ী
মালিক,আজিজ কর্পোরেশন
৭৭ বেগম বাজার,ঢাকা।